নিউজ প্রাচ্যের ডান্ডি: কথায় আছে- পাটাপোঁতার ঘষাঘষি, মরিচের মরণ! ঠিক যেন তেমনটাই হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগে শীর্ষ তিন নেতার ক্ষেত্রে বলে দাবী করেছে তৃণমূল।
অর্থাৎ, টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো: শহীদ বাদল আর যুগ্ম সম্পাদক আলহাজ¦ জাহাঙ্গীর আলমের মাঝে মনমালিন্যের সৃষ্টি হলেও বদনামী হতে হয়েছে সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইকে।
শুধুমাত্র জাহাঙ্গীর আলমের একটি বেফাঁস মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই আব্দুল হাইকে সমালোচিত হতে হয়েছে বলে দাবী করেন তৃণমূল নেতৃবৃন্দরা। অথচ, সেই ভিপি বাদলের সাথেই পরক্ষণে এক টেবিলে বসে চা পান করা থেকে আড্ডায় মগ্ন থাকতে দেখা গেছে জাহাঙ্গীর আলমকে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জাহাঙ্গীর আলমের একটি পোস্ট করা ছবি দেখে তৃণমূলের নেতৃবৃন্দরা এমনই মন্তব্য করেন। তারা বলেন, পাটা-পোঁতার ঘষাঘষির মত বিপি বাদল ও জাহাঙ্গীর আলম ঝগড়া করলেও তাদের সেই ঘষাঘষিতে আব্দুল হাইকে মরিচের মত পড়ে সমালোচনার ভাগিদার হতে হচ্ছে। যা দলের জন্য শুভকর নয়।
দলীয় সূত্রে জানাগেছে, বিগত ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইকে সভাপতি, এড. আবু হাসনাত মো: শহিদ বাদলকে সাধারন সম্পাদক ও ডা: সেলিনা হায়াত আইভীকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করে তিন সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটির ঘোষণার প্রায় বছর খানেক পর ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর গত ১৫ জানুয়ারী সকাল সাড়ে ১০ টায় শহরের ২ নং রেলগেটস্থ কার্যালয়ে সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির ওয়ার্কিং কমিটির প্রথম বৈঠকে ১০ ফেব্রুয়ারী টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
কিন্তু অনিবার্য কারনে এদিন আর টুঙ্গিপাড়ায় যেতে পারেনি জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দরা।
পরবর্তীতে ১৭ ফেব্রুয়ারী টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণের সিদ্ধান্ত নেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই।
কিন্তু সেই কর্মসূচীও স্থগিত করা হয়। সর্বশেষ সর্বসম্মতিক্রমে ৩ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা আওয়ামীলীগ।
যার প্রেক্ষিতে গত ৩ মার্চ সকাল ৭ টায় শহরের ২ নং রেলগেটস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিশাল বহর নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দরা।
টুঙ্গিপাড়ায় পৌছানোর পর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই, সাধারন সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো: শহিদ বাদল ও সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা: সেলিনা হায়াত আইভীর নেতৃত্বে জেলার নেতৃবৃন্দরা স্বাধীন বাংলার স্থপতি ও স্বপ্নদ্রষ্টা তথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করে দোয়া মোনাজাত করেন।
কিন্তু সেইদিন টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারতে ঐক্যের শপথ করে উল্টো ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ!
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভীর জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার পর তাকে রেখেই পৃথকভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই ও সাধারন সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো: শহীদ বাদল দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রথমে বঙ্গবন্ধুর মাজারে পুস্পস্তর্বক অর্পণ করায় যুগ্ম সম্পাদক আলহাজ¦ জাহাঙ্গীর আলমের করা একটি মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এখন দলে ভাঙ্গনের শংকা করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
মেয়র আইভীকে নিয়েই বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করা হলেও আব্দুল হাইয়ের এই দাবীকে মিথ্যা দাবী করেন জাহাঙ্গীর আলম। আর আইভীকে রেখেই জেলা আওয়ামীলীগের একক শ্রদ্ধাঞ্জলীর নেপথ্যে এড. আবু হাসনাত মো: শহীদ বাদলের একগুয়েমিকেও দায়ী করেন জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি অভিযোগ করেন, আব্দুল হাই মত না দিলে মেয়রকে রেখে কিছুতেই শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারতো না জেলা আওয়ামী লীগ। তিনি সম্মতি দিয়েছেন বলেই সেদিন মেয়রকে রেখেই শ্রদ্ধা জানানোর পর্বটি শেষ হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম আরো অভিযোগ করেছিলেন, শুধু টুঙ্গিপাড়াতেই নয়, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরেও একই কাজ করেছিলেন আব্দুল হাই ও আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল। আর এসব কিছুর নেপথ্যে জড়িত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল। তিনিই আব্দুল হাইকে দিয়ে এই বিভাজনের কাজ করাচ্ছেন। আর আব্দুল হাই বাদলকে ভয় পান বলেই কোন প্রতিবাদ করেন না।
তখন জাহাঙ্গীর আলমের এমন মন্তব্যে জেলা আওয়ামীলীগে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হলে বিনাদোষে সমালোচিত হন আব্দুল হাই।
আর বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করতে গিয়ে কি এখন জাহাঙ্গীর আলমের উদ্ভট মন্তব্যে জেলা আওয়ামীলীগে ভাঙ্গনের ষড়যন্ত্র চলছে কিনা জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই তখন নিউজ প্রাচ্যের ডান্ডিকে বলেছিলেন, ‘বাদল আমার অনেক ছোট। তাকে আমি ¯েœহ করি। কিন্তু বাদলকে আমি ভয় পাই বলে জাহাঙ্গীর আলম যেই দাবী করেছেন, সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি জাহাঙ্গীরকে ফোন করে যখন তার এহেন মন্তব্যের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি, তখন সে আমার কাছে অস্বীকার করেছে।’
আব্দুল হাই আরো দাবী করেছিলেন, ‘জেলা আওয়ামীলীগের ঐক্য অটুট আছে, থাকবে। কারো কথায় বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের সংগঠনে ভাঙ্গন হবেনা।’
আর ভিপি বাদলের সাথে সামান্য বিষয়ে আব্দুল হাইকে জড়িয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হলেও পরক্ষনেই জাহাঙ্গীর আলম ফের বাদলের সাথেই এক টেবিলে বসে চা পানে আড্ডা দেয়ার দৃশ্যে অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায়, পাটা-পোঁতা খ্যাত এই দুই নেতার কারনেই আব্দুল হাইকে সমালোচিত হতে হয়েছে।