নিউজ প্রাচ্যের ডান্ডি: বিএনপি’র চেয়ারপার্সণ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে দলটির চলমান আন্দোলন কর্মসূচিতে লাপাত্তা নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি কাজী মনিরুজ্জানান ও সহ সভাপতি শাহ আলম। আর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ কারাগারে থাকায় সরকারী দলের দালাল খ্যাত সহ সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসের মাধ্যমে দায় সারছে জেলা বিএনপি, যা শংকিত করে তুলেছে মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীদের।
জেলা বিএনপি’র দুই শীর্ষ নেতা কাজী মনির আর শাহ আলমের আত্মগোপনের কারনে আজাদ বিশ্বাসের মতো দালালের মাধ্যমে দায়সারা আয়োজনে নেত্রীর মুক্তির দাবীতে ডাকা কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি।
বিএনপি’র সাইনবোর্ডে সরকারী দলের এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত আজাদ বিশ্বাসের নেতৃত্ব মানতে রাজি নয় তৃণমূল, সেই সাথে আজাদের কাছ থেকে দলের সকল তথ্য সরকারী দলের কাছে পাচার হয়ে যাওয়ার অশংকাও দেখা দিয়েছে নেতাকর্মীদের মনে। আর যে গাঁ বাঁচানো নেতাদের কারনে আজাদ বিশ্বাসের মতো অবিশ্বাসী লোকের হাতে দায়িত্ব চলে যায়, সেই স্বার্থপর নেতাদের বাদ দিয়ে রাজপথের পরীক্ষিত নেতাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার দাবী জানিয়েছে তৃণমূল।
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান গত বছরের ফেব্রুয়ারীতে কমিটি গঠন হওয়ার পর প্রায় এক বছরে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে উজ্জীবিত করতে পারেননি। বরং জাতীয় বা দলীয় কর্মসূচি পালনে বারবার বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর সর্বপ্রথম জেলা বিএনপি’র বড় আয়োজন কর্মীসভায়ও চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। জেলা বিএনপি’র সহ সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদ বিশ^াস সে অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের দ্বারা লাঞ্ছিত হন।
এরপর থেকে যে কোন কর্মসূচিতে আর নেতাকর্মীদের নিয়ে মনে রাখার মতো কোন আয়োজন করতে পারেননি কাজী মনির ও মামুন মাহমুদ। এমনকি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানার প্রতিবাদে ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের ধাওয়ায় নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে ফেলে পালিয়ে যান জেলা বিএনপি’র সভাপতি কাজী মনির।
দলীয় চেয়ারপার্সণের কক্সবাজার যাত্রা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ অতিক্রমের সময় নেতাকর্মী নিয়ে শোডাউন করার ক্ষেত্রেও সুপার ফ্লপ থাকেন তিনি। এদিন নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে অল্প কিছু নেতাকর্মী নিয়ে জেলা বিএনপি’র সভাপতি কাজী মনির।
সর্বশেষ বিএনপি’র চেয়াপার্সণ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া আরফানেজ ট্রাষ্ট মামলায় সাজার রায় ঘোষনার দিন ধার্য হওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে চলে যান এই সুযোগ সন্ধানী নেতা। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা পর্যন্ত গ্রেফতার হয়ে আর মামলা মোকদ্দমায় নাজেহাল হলেও কাজী মনিরের গায়ে এর আঁচ পর্যন্ত লাগেনি।
গত এক বছরে ২৬ সদস্যের আংশিক কমিটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে ব্যর্থ এই সভাপতি ২৬ কাঠি কখনো একই করতে পারেননি। ফলে নেতাকর্মীদের কাছে জেলা বিএনপি’র সভাপতির মতো দায়িত্বপূর্ণ পদের জন্য অয়োগ্য হয়ে পরেন কাজী মনির। তার নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র নেতাকর্মীরা উজ্জিবীত না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয় সাবেক জেলা বিএনপি’র সভাপতি এড. তৈমূর আলম খন্দকারকে। আর মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের জন্য উচ্চ আদালতে আইনী লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকায় তৈমূরের অনুপস্থিতিতে জেলা বিএনপি’র নেতৃত্বের ভার এসে পরে সহ সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদ বিশ^াসের কাঁধে।
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে একটি বিতর্কিত চরিত্রের নাম এড. আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, যিনি নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র নেতাকর্মীদের কাছে দালাল বিশ্বাস নামে বেশী পরিচিত। বিএনপি’র ব্যানারে রাজনীতি করলেও সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে তাকে কখনো রাজপথে পায়নি দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি’র নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীরা। সরকারী দলের হামলা মামলায় জর্জরিত হয়ে যেখানে দেশব্যাপী বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাযাবর জীবন যাপণ করছে, সেখানে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সহ সভাপতি পদ পাওয়া এই নেতা আজাদ বিশ^াসের গাঁয়ে এর কোন আচড়ও লাগে না। কোন মামলায় তাকে আসামী করা হয় না।
এমনকি বিএনপি’র মিছিল মিটিং না করলেও সরকারী দলের সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সরকারের এমপি মন্ত্রীদের প্রশংসা সূচক বক্তব্য দিতে তাকে প্রায়শই দেখা যায়। ফতুল্লায় সরকারী দলের এক অনুষ্ঠানে সরকারী দলের এক মন্ত্রীর উপস্থিতিতে আজাদ বিশ্বাস নিজেকে শামীম ওসমানের কর্মী বলে বক্তব্য দেন। যা তৃণমূল নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু করে দেয়।