‘লাভ ইজ ডিভাইন’ ইংরেজি এই প্রবাদটির সাথে সকলেই পরিচিত। যার বাংলা অর্থ – ‘ভালোবাসা স্বর্গীয়’। ভালোবাসা কোন বয়সের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। যেকোন সময়, যেকোন মুহূর্তে, যেকোন ব্যক্তির সাথে হয়ে উঠতে পারে ভালোবাসার সম্পর্ক। সেরকমই একটি ঘটনা ঘটেছিল দেশের নাটোর জেলায়। ৪০ বছরের ডিগ্রি কলেজ’র শিক্ষিকা বিয়ে করেছিলেন ২২ বছরের এক ছাত্রকে। ঘটনাটি দেশের সংবাদ মাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলেছিল। কিন্তু সে বিয়ের ৮ মাস না পেরুতেই আত্মীয় স্বজন ও পরিবারের চাপে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ৪০ বছরের শিক্ষিকা এমনটাই দাবি তার স্বামীর।
নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোছা. খাইরুন নাহার। প্রথমে বিয়ে হয়েছিল রাজশাহীর বাঘায়। সেখানে তার এক সন্তানও রয়েছে। তবে পারিবারিক কলহে সে সংসার বেশি দিন টিকেনি। তারপর কেটে যায় অনেক দিন। এরই মাঝে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় ২২ বছরের যুবক মামুনের সঙ্গে।
গত বছর জুন মাসে খায়রুন নাহারের সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয় একই এলাকার ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মামুন হোসাইনের। তাদের মধ্যে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ তৈরি হয় এবং প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত বছরে ডিসেম্বরে তারা বিয়ে করেন। তবে সামাজিক চাপের ভয়ে বিষয়টি প্রথমে গোপন করেছিলেন। এই দম্পতির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমে তাদের সম্পর্কে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর তারা সাধুবাদ যেমন পেয়েছেন তেমনি ব্যাপক সমালোচনার মুখেও পড়েন। এরই সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় খায়রুন নাহারের মরদেহ পাওয়া গেল। খায়রুন নাহারের মরদেহ উদ্ধারের পর এই ঘটনা নিয়ে রবিবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা শুরু হয়।
এ বিষয়ে স্বামী মামুন হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আট মাস বিয়ে করেছি এক দিনও দেখলাম না মুড ভালো আছে। মুড খারাপ কারন আত্মীয় স্বজন ফোন দিয়ে একটা কথা বলে, একটা কলিক ফোন দিয়ে বলে, বোন ফোন দিয়ে বলে হাটুর বয়সী সাওয়াল বিয়ে করছো, যত কুরুচিপূর্ণ কথা শুনতে হয়’।
নান্নু মোল্লা ম্যানশনের প্রহরী নিজাম উদ্দিন বলেন, গতকাল শনিবার রাতে মামুন-খায়রুন দম্পতির বাসায় শুধু তাঁরাই ছিলেন। রাত দুইটার দিকে মামুন তাঁর কাছ থেকে প্রধান ফটকের চাবি নিয়ে বাইরে যান। ভোর ছয়টার সময় বাসায় ফিরে আসেন এবং সাতটার সময় তাঁর স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন বলে জানান। খায়রুনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে গলায় দাগ আছে। ড্রয়িংরুমের সিলিং ফ্যানে একটুকরা পোড়া কাপড় দেখা গেছে। কাপড়টির কিছু অংশ মেঝেতেও পড়ে ছিল। পোড়া কাপড়ের ব্যাপারে তিনি ভোরে মামুনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। ওই সময় তিনি বলেছেন, ঘটনার সময় তিনি শোবার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। পাশের রুমে শব্দ শুনে এসে তিনি তাঁর স্ত্রীকে ঝুলতে দেখেছেন। ওড়না খোলার জন্য তিনি তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন।
নাটোর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই প্রেমকাহিনী বহুল আলোচিত হয়েছে। সেসময় তারা দু’জন বিষয়টিকে পজিটিভলি নিয়েছিল। পরবর্তীতে সামাজিক, পারিবারিক এবং কর্মক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতায় তাদের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। এসময় চাপে আজকের ঘটনা আত্মহত্যা কি না সেটা তদন্ত করে দেখবো। আমরা মনে করি তদন্তে মূল রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে। স্বামীকে আমরা হেফাজতে নিয়েছি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি’।