নিউজ প্রাচ্যের ডান্ডি: আমি লজ্জিত এবং দু:খিত একারণে যে, স্বাধীন বাংলাদেশে বৈধ ভাবে ব্যবসা করে খাওয়া একজন স্বাধীন নাগরিক কে আজ ২৫ দিন যাবৎ রাস্তায় অবস্থান নিতে হচ্ছে। আমাদের মতো কোন রাজনীতিবীদের চাপে, প্রভাবে তাদের রাস্তায় লাঠিপেটা খেতে হচ্ছে। তাদের মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার ওই সকল মালামাল আসতে সিটি করপোরেশনের সামনে গিয়ে কান্নাকাটি করতে হচ্ছে। এই দৃশ্য দেখার জন্য আমরা রাজনীতি করি না। আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এমন রাজনীতি করতে শেখায়নি।
সোমবার (১৫ জানুয়ারী) বিকেল ৪ টায় নগরীর চাষাড়াস্থ সিটি মাকের্টের সামনে নারায়ণগঞ্জ হকার্স সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এই কথা বলেন।
শামীম ওসমান বলেন, ‘হকারদের পক্ষে কথা বলি বলে কিছু লোক বলে বেড়ায়, শামীম ওসমান নাকী শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আজকে যারা হকারদের পেটে লাথি মেরে তাদের আয় রোজগার বন্ধ করে দিয়েছে, হকারদের সাথে দূর্ব্যবহার করছে, নির্বাচনের সময় ওই মানুষগুলোই আবার হকারদের দাড়প্রান্তে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করে। আমি শামীম ওসমান ভন্ডামীর রাজনীতি করি না। আমরা জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার রাজনীতি করি। যিনি আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে মানুষকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে হয়। সাধারণ মানুষকে নিয়েই আমাদের রাজনীতি করতে হয়। সুতরাং কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে একবার তাদের অবস্থার কথাটাও চিন্তা করা আমাদের উচিত।’
তিনি আরো বলেন, ‘ক্ষুধার কষ্ট কি আমি শামীম ওসমান বুঝি। ৭৫ এর পরবর্তী সময়ে যখন আমার বাবা জেলে ছিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে আমার বড় ভাই নাসিম ওসমান বাড়ি ছাড়া হলেন, তখন আমরা না খেয়েও দিন কাটিয়েছি। তোলারাম কলেজের ভিপি থাকা অবস্থায় আমার হাত দিয়ে স্বাক্ষর করে অনেক শিক্ষার্থীকে আমি ফ্রিতে ভর্তি হবার সুযোগ করে দিয়েছি। অথচ মাত্র ৯’শ টাকার জন্য আমি আমার এইচএসসি পরিক্ষার ফরম পূরন করতে পারছিলাম না। তৎকালীণ সময়ে যে সকল ব্যবসায়ীরা বঙ্গবন্ধুর নাম বিক্রি করে আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছিল, তারাও আমার বড় ভাই সেলিম ওসমানকে ৯’শ টাকা দেয়নি আমার ফরম পূরন করতে। এরপর আমার কলেজের প্রফেসর আমাকে পরিক্ষা দিতে সুযোগ করে দিলে আমি পরিক্ষা দিলাম। সুতরাং আমি জানি সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করতে না পারা একজন পিতার বুকের কষ্ট। পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে না পারা একজন অভিভাবকের চোখের ভাষা। এসব জানতে রাজনীতি করতে হয় না। মানুষ হতে হয়। অমানুষ হলে এসব বুঝা যায় না।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘আমার ছোট বোন মেয়র আইভী বলেছেন, আমি নাকী ছেলের বিয়েতে ২৫ কোটি টাকা খরচ করেছি। আমি তাকে বলবো আমার জন্য দোয়া করবেন। সামনেই মেয়ের বিয়ে। আমি যেন মেয়ের বিয়েতে আরো বেশি টাকা খরচ করতে পারি। যদি আল্লাহ তায়ালা আমাকে তৌফিক দেন, তবে ২৫ কোটি নয়, হকারদের উন্নয়নে ২৫’শ কোটি টাকা দিয়ে দিবো। আমরা দিতে জানি। আমার বড় ভাই সেলিম ওসমান ইতিমধ্যেই নগরীর শিক্ষা, চিকিৎসাক্ষেত্রে উন্নয়নে ৮০ কোটি টাকা দান করেছেন। তিনি হকারদের এই সমস্যা সমাধানে ইতিমধ্যেই ব্যবসায়ী, মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলেছেন। বিষয়টি সমাধানে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
শামীম ওসমান আরো বলেন, ‘আল্লাহ দাম্ভিকতা ও অহংকারীদের পছন্দ করেন না। আপনারা আমার বোন মেয়রের জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাকে হেদায়েত দান করেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাজনীতি করি আল্লাহকে খুশি করার জন্য। এই শিক্ষা শেখ হাসিনা আমাদেরকে দিয়েছেন। ইচ্ছা হলো রাস্তা থেকে লাঠি পেটা করে মানুষের ব্যবসা বন্ধ করে দিলাম, একবার ভাবলামও না এই লোক গুলো কালকে থেকে কীভাবে চলবে। কীভাবে তারা তাদের সুদের টাকা পরিশোধ করবে, কীভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে চলবে। ওইসব চলবে না। আমি বুঝিনা যে কোন উৎসবের আগে কেন হকার উচ্ছেদ করা হয়। অন্তত দুই মাস আগে থেকে কেন হকারদের আগাম শতর্ক করা হয় না। যারা একাজ করেছেন, কাউকে আয় রোজগারের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন নি, খাবার দিতে পারেন নি, দিয়েন না। কিন্তু কারো মুখের খাবার কেড়ে নিয়েন না। এতো দাম্ভিকতা ভালো না। এসকল হকাররা ফুটপাতে বসলে হয়তো নারায়ণগঞ্জবাসীর চলাচলে সাময়িক অসুবিধা হয়। কিন্তু তাই বলে ৫ হাজার হকারকে বেকার করে ২৫ হাজার পরিবারের সদস্যকে আপনি অনাহারে রেখেন না। দেশের ৮৫ ভাগ মানুষ দরিদ্র। এই শীতে তাদের পক্ষে সম্ভব না আমার মতো দামী কোন মার্কেট থেকে দামী পোশাক কিনে পরার। তাই তারা হকার্স মার্কেটে হুমড়ি খেয়ে পরে। অনেকেই বলে এই ৫ হাজার হকারের কাছে নাকী নগরীর ৫ লাখ মানুষ জিম্মি। আমার মনে হয় এদের মধ্যে ৪ লাখ লোকই স্বল্প আয়ের এবং এরা এসকল ফুটপাত থেকেই তাদের সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করে। কলকাতার মতো বড় শহরের ফুটপাতেও তো হকার বসে। কই সেখানে তো কোন উচ্ছেদ হয় না। ঢাকায় হকার উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছিল। হকারদের উপড় লাঠিপেটা করা হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জে এসব চলবে না। নিজে দোষ করবেন আর গালি খাবে নেত্রী, এসব সহ্য করবো না। আমার নেত্রী বলেনাই পূনর্বাসন না করে এভাবে হকারদের পেটে লাথি মেরে তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দাও। পূনর্বাসন না করে হকার উচ্ছেদ করো। আমি সেলিম ওসমানের মতো ভদ্র না। যে কর্মচারী দিয়ে চিঠির জবাব দিবেন সেটা মেনে নিব। আমি শামীম ওসমান। আমি ঘোষণা দিচ্ছি, নারায়ণগঞ্জে হকার বসবে। এখন সাড়ে ৪টা, (বক্তব্যের সময়) আগামীকাল বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সময় দিলাম। এর মধ্যে মাননীয় মেয়র, ডিসি, এসপি হকারদের সাথে বসেন। প্রয়োজনে আমাকেও ডাকতে পারেন। হকারদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করুন। তাদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন। নয়তো তাদের নিয়মশৃঙ্খলার মধ্য মধ্যে বসার অনুমতি দিন। আমি পুলিশ প্রশাসনকে বলতে চাই, হকাররা আমার ভাই, আমার পরিবার। আমি নির্দেশ দিলাম, আগামীকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে যদি কোন সমাধান না আসে, তাহলে বিকেল ৫টার পর থেকে তারা ফুটপাতে বসবে। এদের উপড় লাঠিপেটা তো দূরের কথা, কেউ এদের গালিও দিতে পারবেন না। আমিও চাইনা ফুটপাতের পরিবেশ নষ্ট হউক। কিন্তু আগামী ২১ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত তাদের সুযোগ দেয়া হউক যেন তারা তাদের ধার দেনা এই সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে পারে। এরপর একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করবো। কেউ যদি ভাবেন, পূনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে নগরী থেকে হকার উচ্ছেদ করবে, আমি মনে করি সেটা পারবে। তবে শামীম ওসমানের মৃত্যুর পর। আমি বেঁচে থাকতে হকারদের উপড় কোন অত্যাচার হতে দেবো না। যদি কোন মাস্তান আসে হকারদের সাথে মাস্তানী করতে, আমি ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের কর্মীদের নির্দেশ দিব যাতে তাদের প্রতিহত করা হয়। বাকিটা আমি বুঝবো। তবে হকারররা একটাকাও কাউকে চাঁদা দিবেন না। যারা চাঁদা নিতে আসবে, তাদের বেঁধে রাখবেন। যদি গায়ে হাত তুলে তো সহ্য করবেন। বাকিটা আমি বুঝবো।’
নারায়ণগঞ্জ হকার্স সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মো: আসাদুল ইসলাম আসাদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন, সিপিবি জেলা সভাপতি কমরেড হাফিজুল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো: শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ নিজাম, শহর যুবলীগ সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছা সেবকলীগ সভাপতি জুয়েল আহম্মেদ, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মেখ সাফায়েত আলম সানী, মহানগর ছাত্রলীগ আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান রিয়াদ, মহানগর হকার্সলীগ সভাপতি আব্দুর রহিম মুন্সী প্রমুখ।