নিউজ প্রাচ্যের ডান্ডি: তিন চাকা বিশিষ্ট ব্যাটারী চালিত যান ইজিবাইক। যা সরকার ঘোষিত একটি অবৈধ যানবাহন। তাই দিনের বেলায় নগরীর প্রধান সড়কে এই যানের চলাচলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা আরোপ।
কিন্তু সেই প্রশাসনেরই কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য ও ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা দিনের বেলাসহ রাত ৮ টার পর নারায়ণগঞ্জ নগরীর প্রধান সড়কে অবৈধ ইজিবাইক চলাচলে নির্দিষ্ট হারে চালকদের কাছ থেকে চাঁদা প্রাপ্তির পর দিচ্ছেন চলাচলের পারমিশন। আর চাঁদা দিতে যেই সকল চালকরা অনীহা প্রকাশ করছেন, তাদের উপরও তাৎক্ষনিক নেমে আসে অসাধু পুলিশ সদস্যদের ক্ষমতার খড়গ! জব্দ করা হয় ইজিবাইক, নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশ লাইনস্ কিংবা ট্রাফিক অফিস বা চাষাড়া পুলিশ বক্সেও সামনে। চালককে করা হয় সর্বনিন্ম ১ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা। অত:পর দর কষাকষি শেষে পুলিশের নির্ধারিত সেই জরিমানা বিনা রশিদে প্রদান করে গাড়ী ছাড়িয়ে নেন ইজিবাইক চালকরা।
প্রতিদিনই দিনের বেলায় নগরীর খানপুর মেট্রোহল মোড়, কালীবাজার কালী বাড়ী মোড়, চাষাড়া পুলিশ বক্স ও নিতাইগঞ্জ মোড় এবং রাত ৮ টার পর শহরের ২নং রেলগেট এলাকায় এমনই ঘটনা ঘটছে। মূলত যেসকল চালকরা ঐসকল স্থানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন, কেবল মাত্র সেই সকল চালকরাই দিনে কিংবা রাতের নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে নগরীর প্রধান সড়কে বুক দাবড়িয়ে ইজিবাইক চালানোর সুযোগ পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ইজিবাইক চালকরা।
আর চালকদের অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরীর খানপুর মেট্রোহল মোড়ে গিয়ে এর সত্যতাও মিলেছে।
দিনের বেলায় ইজিবাইক শহরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রতিদিন ২শ’ টাকা চাদাঁর বিনিময়ে কালীরবাজারের সড়ক পর্যন্ত চলাচলের সুযোগ পাচ্ছে ইজিবাইক চালকরা। আর চাদাঁ না দিয়ে কেউ কালীরবাজারে প্রবেশ করলেই তার গাড়ী জব্দ করে জরিমানা বাবদ আদায় করা হচ্ছে ২ হাজার ২শ’ টাকা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেট্টো হলের মোড়ে একটি ইজিবাইকের যাত্রীদের নামিয়ে একটি ইজিবাইক আটক করে সেখানে ইজিবাইক নিয়ন্ত্রনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কন্সটেবল মেহেদী। এসময় ইজিবাইক চালককে মেহেদীর পায়ে ধরে কান্না করতে দেখা যায়। পরিচয় গোপন রেখে এই প্রতিবেদক পুলিশ কন্সটেবল মেহেদীর কাছে জানতে চায় ‘কেন এই ইজিবাইকটি আটক করা হয়েছে’।
উত্তরে মেহেদী বলেন, ‘খানপুর হাসপাতালের পরে ইজিবাইক আর সামনে আসার নিয়ম নেই। তাই তাকে আটক করা হয়েছে।’
তাহলে অন্যান্য অনেক ইজিবাইক কালীরবাজারে প্রবেশ করলেও তাদের কেন আটক করছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে মেহেদী বলেন, ‘ঐগুলো দুই নাম্বারী করেই কালীরবাজারে প্রবেশ করেছে আর এই ইজিবাইক চালকতো তিন নাম্বারী করেছে। ওকে ছাড়া যাবে না। ছাড়া পেতে হলে ওকে ২২শ’ টাকা দিতে হবে রেকার বিল বাবদ।’
এদিকে দুই নাম্বারী আর তিন নাম্বারী শব্দের অর্থে জানতে ইজিবাইক চালকরদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, ‘প্রতিদিন সকালে দায়িত্বে থাকা পুলিশকে একশ ও বিকেলে দায়িত্বে থাকা পুলিশকে একশ টাকা চাঁদা দিয়ে কালীরবাজারে প্রবেশ করতে পারে যেকোন ইজিবাইক চালক। আর টাকা না দিয়ে গোপনে কেউ কালীরবাজারে প্রবেশ করলে মানে তিন নাম্বারী করে প্রবেশ করলে তাকে আটক করা হয়।’
এছাড়া রাত ৯টার পূর্বে নগরীর ২নং রেলগেট এলাকা ঘুরতে গেলেই সেখানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে গাড়ী প্রতি চালকদের ২০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। অন্যথায় গাড়ীর চাকা ফুঁটো করে দেন ট্রাফিক পুলিশরা বলে াভিযোগ করেন ইজিবাইক চালকরা।
এব্যপারে জানতে সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) আব্দুর রশিদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেন নি।