নিউজ প্রাচ্যের ডান্ডি: বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের যুগে একটু ভিন্ন আঙ্গিকেই যথাযথ মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশ ও উৎসবের আমেজে নারায়ণগঞ্জে উদযাপিত হচ্ছে মুসলমান ধর্মালম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় আনুষ্ঠান পবিত্র ঈদুল আযহা।
শনিবার (১ আগষ্ট) সকালে নিজ নিজ এলাকা ভিত্তিক মসজিদে ঈদের নামাজ আদায়ের পর আল্লাহতা’লার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন লাভে ত্যাগের মহিমায় পশু কোরবানী দেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। কারন, করোনা ভাইরাসের কারনে এবছর সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক কেন্দ্রীয় ঈদগাহে বৃহৎ পরিসরে কোন ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়নি।
সরেজমিন নগরীর নিতাইগঞ্জ, মন্ডলপাড়া, বাবুরাইল, জল্লারপাড়, খানপুর, জামতলা, মাসদাইরসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, আর্থিক সাধ্য অনুযায়ী সামর্থ্যবান মুসলমান ধর্মালম্বীদের মধ্যে এদিন কেউ একটি গরু, কেউ অনধিক, কেউ ছাগল, ভেড়া আবার কেউবা দিয়েছেন উট কোরবানী।
তবে কয়েক বছরের ন্যায় এবারও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন পরিবেশ দূষণ রোধে নগরীর ২৭ টি ওয়ার্ডের নির্ধারিত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু কোরবানীর ব্যবস্থা করলেও বেশীরভাগ এলাকাতেই নাসিকের নির্ধারিত স্থানের পরিবর্তে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই বাড়ীর পাশের সড়কে এবং আঙ্গিনায় পশু জবাই করেন মুসল্লিরা।
ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী জানাগেছে, মহান আল্লাহ তা’আলা ইসলামের নবী হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি কোরবানী করার নির্দেশ দেন “তুমি তোমার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানী করো”। ইব্রাহীম স্বপ্নে আদেশ পেয়ে তখন ১০টি উট কোরবানী করলেন। পুনরায় তিনি আবারো একই স্বপ্ন দেখলেন।
অত:পর ইব্রাহীম আবারো ১০০টি উট কোরবানী করেন। এরপরেও তিনি একই স্বপ্ন দেখে ভাবলেন, আমার কাছে তো এই মুহূর্তে প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.) ছাড়া আর তেমন কোনো প্রিয় বস্তু নেই। তখন তিনি তাঁর পুত্রকে কোরবানীর প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
আর এই প্রস্তুতি নেয়ার সময় শয়তান আল্লাহর আদেশ পালন করা থেকে বিরত করার জন্য ইব্রাহীম ও তার পরিবারকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করলে ইব্রাহীম তখন শয়তানকে পাথর ছুঁড়ে মারেন। তারপর যখন ইব্রাহীম আরাফাত পর্বতের উপর তার পুত্রকে কোরবানীর দেয়ার জন্য গলা কাটার চেষ্টা করেন, তখন তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন তাঁর পুত্রের পরিবর্তে একটি প্রাণী কোরবানী হয়েছে এবং তাঁর পুত্রের কোন ক্ষতি হয়নি। অর্থাৎ, আল্লাহর আদেশ পালন করার দ্বারা পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হন ইব্রাহীম।
পরবর্তীতে আল্লাহর শেষ রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে পশু কোরবানীর বিধানটি চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর পশু কোরবানীর মধ্য দিয়ে মুসলমানরা পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করে আসছেন।
হিজরী বর্ষপঞ্জি হিসাবে জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ তারিখ পর্যন্ত ৩ দিন ধরে ঈদুল আযহা চলে। অর্থাৎ, এই তিনদিনই মুসলমানরা পশু কোরবানী দিয়ে থাকেন।
আর ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মুসলমানরা এই পশু কোরবানীর মাংস তিন ভাগে ভাগ করে ১ ভাগ গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে, ১ ভাগ আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে বন্টন করবেন এবং ১ ভাগ নিজেদের খাওয়ার জন্য রাখবেন।