নিউজ প্রাচ্যের ডান্ডি: উৎপাদন মজুরী বৃদ্ধির দাবীতে কাশীপুরের ভোলাইলে অবস্থিত এন আর গার্মেন্টের বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের এমপি শামীম ওসমানের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শান্ত হলেও ফের সড়ক অবরোধ করে বিসিক শিল্পাঞ্চলে লাঠি হাতে এদিন ঘন্টার পর ঘন্টা তান্ডবলীলা চালিয়েছে ক্রোনী, রনিসহ বিভিন্ন গার্মেন্টের শ্রমিকরা।
এসময় শ্রমিকরা বেশ কয়েকটি গার্মেন্টে হামলা চালায় ও গাড়ী ভাংচুর করে। আর টায়ার জ¦ালিয়ে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। সাংবাদিকরা লাঠি হাতে থাকা শ্রমিকদের ছবি তুলতে গেলে বাঁধার সম্মুখীন হয়। এরপর সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে বেঁধে যায় সংঘর্ষ। এতে পুলিশ-শ্রমিকসহ আরো অর্ধশতাধিক লোক আহত হন।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় এই শ্রমিক অসন্তোষের সূত্রপাত ঘটে। সরেজমিন দেখাগেছে, কাশীপুরে অনুষ্ঠিত উঠান বৈঠক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শামীম ওসমান ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ মহাসড়ক হয়ে যাওয়ার পথে ভোলাইলে অবস্থিত এন আর গার্মেন্টের বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া দেখে গাড়ী থেকে নেমে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
তিনি তখন বেশ কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে এন আর গার্মেন্টে প্রবেশ করে বিক্ষোভের ব্যাপারে খোঁজ নেন। শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর ঠিক এরআগ মুহুর্তেই বহিরাগত শ্রমিক নামধারী নেতারা পরিবেশ অস্থিতিশীল করে তুলতে উস্কানী দিয়ে শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়ে অর্থনীতিকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে।
শামীম ওসমান আরও বলেন, শ্রমিকদের দাবী থাকতে পারে। এটি পুরণের জন্য মালিকপক্ষ, বিকেএমইএ, প্রশাসন রয়েছে। কিন্তু কারো সাথে কোনরূপ আলোচনায় না বসে এভাবে শ্রমিকদের রাস্তায় নেমে এসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, গাড়ীতে হামলা, ভাঙচুর চালানোটা আমার কাছে ষড়যন্ত্রেরই অংশ মনে হচ্ছে।
কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের ফাঁদে যেন শ্রমিকরা পা না দেয় সেজন্য আন্দোলনরত শ্রমিকদের কারো উস্কানীতে কান না দেয়ার অনুরোধ জানান শামীম ওসমান। পরে শামীম ওসমানের নির্দেশনা মোতাবেক মালিকপক্ষ অন্যান্য গার্মেন্টেস এর ন্যায় উৎপাদন মজুরী বৃদ্ধির আশ^াস দিলে শ্রমিকরা কারখানায় ফিরে যান।
এসময় তাঁর সাথে ছিলেন বিকেএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো: মঞ্জুর কাদের পিপিএমসহ গার্মেন্ট মালিক কৃর্তপক্ষ।
আর শামীম ওসমান এন আর গার্মেন্টের শ্রমিকদের শান্ত করে চলে যাওয়া পরই ফের বিসিকে শুরু হয় শ্রমিকদের তান্ডব। লাঠি ও বাঁশ হাতে নিয়ে শ্রমিক পরিচয়দানকারী দৃস্কৃতিকারীরা শ্রমিকদের উস্কানী দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন গার্মেন্টে ভাংচুর চালায়।
এসময় সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে তাদের সাথে সংঘর্ষে বাঁধে বহিরাগত শ্রমিকরা।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশ-৪ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহাবুব উন নবী জানান, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য শ্রমিকদের বোঝাতে চেষ্টা করে। তবে শ্রমিকদের মধ্যে বহিরাগত শতাধিক যুবক মিলে গিয়ে পুলিশের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ হামলা করে। তারা বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানা ও যানবাহন ভাংচুর করে। এতে পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে বহিরাগতদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় সংঘর্ষে পুলিশসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন বলে জানাগেছে।