নিউজ প্রাচ্যের ডান্ডি: শীত মৌসুম আসার আগেই নারায়ণগঞ্জে বেড়েছে মশার উপদ্রব। মশার যন্ত্রণায় রীতিমত এখন দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে নগর জীবন। রাতের পাশাপাশি দিনের বেলায় মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় যেন মশার নগরীতে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ। আর সেই সাথে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মশাবাহিত রোগ।
কিন্তু মশক নিধনে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নামে মাত্র কয়েকটি ওয়ার্ডে স্প্রে ছিটিয়ে দায় সেরে ফেলায় বাসা-বাড়ীর পাশাপাশি স্কুল-কলেজ, কর্মস্থল এমনকি যানবাহনে চড়ে কোথাও যাওয়ার পথে দিনের বেলাই মশার কাপড় খেতে হচ্ছে জনসাধারনকে।
নগরবাসীর অভিযোগ, মশক নিধনে নাসিক নামমাত্র কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। ফগার মেশিনে ঔষধের পরিবর্তে কেরোসিন জাতীয় দাহ্য তেলের ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন স্থানে মশক নিধনে স্প্রে করা হলেও তাৎক্ষনিক শুধুমাত্র ধোঁয়ায় গোটা এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু মশা আর নিধন হয় না।
সচেতন মহলের অভিযোগ, সারা দেশে চিকুনগুনিয়া বিস্তারের পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই মাস থেকে মাত্র দুই মাসের জন্য মশা নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করেই দায়িত্ব শেষ করেছে নাসিক। তখন চিকনগুনিয়া প্রতিরোধে নগরীতে বেশ কয়েকটি সতর্কবার্তা সম্বলিত ফেস্টুন সাটিয়ে আর কয়েকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলররা স্প্রে কার্যক্রমের ফটোসেশন করেই নিজেদের দায় সারেন। কিন্তু কোথাও তেমন ভাবে মশক নিধনে নিয়মিত ঔষধ স্প্রে করতে দেখা যায়নি।
নগরীর শীতলক্ষ্যা, নিতাইগঞ্জ, ডাইলপট্টী, টানবাজার, কালীরবাজার, ডিআইটি, দেওভোগ, চাষাড়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই কয়েকদিন ব্যাপী টানা বর্ষণের পর থেকে মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়ছে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত নানা রোগের বিস্তার।
নগরীর টানবাজার সাহা পাড়া এলাকার গৃহিনী হ্যাপী রায় জানান, ‘নদীর তীরে বাসা হওয়ার কারনে রাতের পাশাপাশি এখন দিনের বেলায়ও মশার উপদ্রব চরম আকারে বেড়েছে। মশার কারনে বাচ্চারা সন্ধ্যায় ঠিকভাবে পড়ালেখা করতে পারছেনা। কয়েল জ¦ালালে দেখাযায় চোখ জ¦ালাপোড়া করে, ধোঁয়ায় ঘর আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়ে মশারীর ভিতরে বাচ্চাদের লেখাপড়া করাতে হচ্ছে।’
চাষাড়া এলাকার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক আব্দুস সোবহান জানান, ‘আগে মশা মারার জন্য অলিগলিতে স্প্রে করা হলেও এখন আর সেটি চোখে পড়ে না। আমরা সিটি কর্পোরেশনকে ট্যাক্স দিচ্ছি ঠিকই, কিন্তু দায়বদ্ধতা থাকলেও কর্তৃপক্ষ নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তেমন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরেও মশার উপদ্রবে পরিবার পরিজনের সাথে ঠিকভাবে সময় দেয়া যাচ্ছে না।’
শীতলক্ষ্যা তোলারাম মোড় এলাকার বাসিন্দা বাদশা মিয়া অভিযোগ করেন, ‘নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন এখানে নাসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা ফেলে স্তূপ তৈরী করার কারনে একদিকে যেমন দূর্গন্ধে এই এলাকায় বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে, তেমনি দিন-রাত সবসময়ই মশার পাশাপাশি মাছির উপদ্রবেও আমাদের অতিষ্ঠ হতে হচ্ছে। কিন্তু নাসিকের পক্ষ থেকে আদৌ পর্যন্ত এইখানে মশক নিধনের কোন ঔষধ স্প্রে করতে দেখা যায়নি।’
আর নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বহীনতার কারনে মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভীসহ স্ব-স্ব ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দরা।
জানাগেছে, মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত এবং সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মশার প্রজনন হয়। এ সময়ে মশা মারার ঔষুধের প্রয়োজন পড়ে। এখন মশার প্রজনন হার অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশী। সেইসঙ্গে বাড়ছে মশার উপদ্রবও।
এব্যাপারে জানতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের স্যানেটারী ইন্সপেক্টর মো: আলমগীর হিরনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি।