নিউজ প্রাচ্যের ডান্ডি: নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর কেন্দ্রীয় পৌর মহাশ্মশান সংলগ্ন ৬২ শতাংশ জলাশয়ের মালিকানা নিয়ে সৃষ্ট ত্রিপক্ষীয় বিরোধের নিষ্পত্তির লক্ষ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মধ্যস্ততায় সকল পক্ষকে নিয়ে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২৪ জুলাই) সকালে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর কেন্দ্রীয় পৌর মহাশ্মশান সংলগ্ন ৬২ শতাংশ জলাশয়টি প্রায় ১৫০/২০০ বছর যাবত ব্যবহার করে আসছে মহাশ্মশাণ কর্তৃপক্ষ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শেষকৃত্যের পর ভষ্ম পানিতে ভাসিয়ে দেওয়ার কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে এই জলাশয়টি। দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারনে এই জলাশয়টির স্থায়ী মালিকানার জন্য মহাশ্মশাণ কতৃপক্ষ জেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন করে। কিন্তু জনৈক মনির আহম্মেদ গং খরিদসূত্রে এই জলাশয়ের মালিকানা দাবী করে তা ভরাট করে ফেলে এবং সেখানে বসতি স্থাপন করে। এ নিয়ে মহাশ্মশান কতৃপক্ষের সাথে মনির গংয়ের বিরোধ দেখা দেয়। এই বিরোধে নতুন মাত্রা লাভ কওে যখন শ্মশান সংলগ্ন মেমন কতৃপক্ষ এই জলাশয়ের মালিকানা দাবী করে। এবং জলাশয়ের রেকর্ড সংশোধনীর জন্য তারা ২০১৪ সালে দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে সরেজমিনে তদন্ত করে এবং তিন পক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার জন্য নির্দেশ দেয়। আদালতের সেই নির্দেশনা মোতাবেক সোমবার নারায়ণগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন হায়দারের সভাপতিত্বে এই সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে মহাশ্মশান কতৃপক্ষের পক্ষে নারায়ণগঞ্জের হিন্দু কমিউিনিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, মহাশ্মশান সংলগ্ন জলাধারটি প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ বছর যাবত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের শেষকৃত্যের পর ভষ্ম ভাসিয়ে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করে আসছে। এর স্থায়ী মালিকানার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কতিপয় লোক আমাদের এখান থেকে উচ্ছেদের পায়তারা করছে, যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তারা রাতের আধারে সে জলাশয়ের প্রায় আশি ভাগ ভরাট করে সেখানে বসতি স্থাপণ করেছে।
তারা আরো বলেন, মনির সাহেবরা জেনে শুনেই এই জায়গা ক্রয় করেছে। তারা জানে এবং বুঝে যে, এই জায়গা দীর্ঘদিন যাবত শ্মশানের দখলে। তারপরও তারা এই জায়গা কি করে কিনলেন। তাছাড়া জলাশয়টি ভরাট না করার জন্য ২০১২ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও মনির গংদের নিবৃত করা যায়নি। উপরন্তু তারা শ্মশানের ছাইয়ে পরিবেশ নষ্ট হয় বলে শ্মশান এখান থেকে সরিয়ে বুড়িগঙ্গার পাড়ে নিয়ে যেতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে চিঠি দেয়।
এ বিষয়ে জলাশয়ের মালিকানার দাবীদার মনির আহম্দে বৈঠকে বলেন, ২০০৭ সালে তিনিসহ বোরহানউদ্দিন ও বদরুল আলম মিলে এই ৬২ শতাংশ জলাশয় জনৈক হাবিবুল্লাহ ও বিষু মিয়ার কাছ থেকে ক্রয় করেছেন। তাই এই জলাশয়ের ক্রয় সূত্রে মালিক তারা। এখন প্রশাসন যদি অধিগ্রহনের মাধ্যমে এই জায়গা শ্মশান কর্তৃপক্ষকে দিতে চায়, তাহলে জমির দাম তাদেরকে দিতে হবে।
এদিকে মেমন সম্প্রদায়ের লোকেরা দাবী করছে এই জায়গার মালিক তারা এবং ২০১৪ সালে রেকর্ড সংশোধনীর জন্য তারা দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করেন।
তিন পক্ষের কথা শুনে নারায়ণগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন হায়দার বলেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। আমাদের এসিল্যান্ড সরেজমিনে গিয়েছেন, আমিও সেখানে যাবো। আর আপনারা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আপনাদের সকল কাগজপত্র ও দলিল যা আছে, তা ডিসি অফিসে দাখিল করবেন। সব কিছু পর্যবেক্ষণ করে একটি সফল সমাধানে আসা হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবুল হোসেন, সিটি কর্পোরেশনের সার্ভেয়ার কালাম মোল্লা, ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরন বিশ^াস, নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর কেন্দ্রীয় পৌর মহাশ্মশান পরিচালনা কমিটির সভাপতি নিরঞ্জন সাহা, ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য পরিতোষ সাহা, নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপণ পরিষদের সভাপতি শংকর সাহা, মহানগর পূজা উদযাপণ পরিষদেও সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন, মেমন কতৃপক্ষের সভাপতি রফিক জাকারিয়া, উপদেষ্টা মোস্তাক জাহিদ, ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন প্রমূখ।