নিউজ প্রাচ্যের ডান্ডি: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেছেন, ‘দেশের নারী সমাজ আজ প্রতিবাদ করতে শিখেছে। তারা নানান প্রতিকূল অবস্থার মাঝেও সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুঁখে দাঁড়াতে শিখেছে। নারীরা এখন কোন ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। নারীরা এখন আর ঘরের বোঝা নয়। তাই আমি অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ রাখবো, আপনারা আপনাদের কন্যা সন্তানদের মানসিক বিকাশের দিক দিয়ে গড়ে তুলোন। তাহলে একসময় এরাই আপনার পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবে।’
শিশু স্বার্থ বিরোধী বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে চাষাঢ়স্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ খেলাঘর কর্তৃক আয়োজিত “না” সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা খেলাঘরের সভাপতি রথীন চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও কেন্দ্রীয় খেলাঘরের চেয়ারপার্সন প্রফেসর মাহফুজা খানম, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী লায়লা হাসান রোজী।
আইভী বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের ফলাফল ভালো করা নিয়ে মায়েদের যে প্রতিযোগীতা থাকে, সেটি শিশুদের স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে বাধাগ্রস্থ করে। তাই শিশুদের মানসিক দিক বিবেচনা করে অভিভাবকদের এই প্রতিযোগীতামূলক মনোভাব থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। শিশুদের বিকাশে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আজকের শিশুই আগামীর ভবিষ্যত।’
তিনি আরো বলেন, ‘দেশে শিশুদের উপড় নির্যাতন নিপীড়ণ বেড়েই চলেছে। নারায়ণগঞ্জও এর বাইরে নয়। গত ৪ বছর পূর্বে মেধাবী ছাত্র তানভীর মাহমুদ ত্বকী হত্যাকান্ড থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে অনেক একাধিক শিশু হত্যা হয়েছে। যদি ত্বকী হত্যার সঠিক বিচার আমরা পেতাম, তাহলে ওই কোমলমতি শিশুদের এমন নির্মম পরিস্থিতি বরণ করতে হতো না। বর্তমানে সরকার দেশে শিশুদের নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধে শিশু হত্যার কয়েকটি বিচারকার্য সম্পন্ন করলেও এখনো অনেক বিচার ঝুলে আছে। সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন হলে শিশু হত্যার প্রবণতা কমে আসবে।’
শিশুদের উদ্দেশ্যে আইভী বলেন, ‘তোমরা শুধু লেখাপড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। শিক্ষার পাশাপাশি তোমাদের খেলাধুলা ও বিনোদনও উপভোগ করতে হবে। তাহলে তোমরা স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে পারবে। তোমাদের চোখে যেটা অন্যায় মনে, হবে, তোমরা কাউকে ভয় না পেয়ে তার প্রতিবাদ করবে। বেশি ভক্তি-শ্রদ্ধা দেখিয়ে ভুল কে কখনো প্রশ্রয় দিবে না।’
এসময় তিনি শিক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলেও এখনো পর্যন্ত তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। কিছু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের মধ্যে স্বৈরাচারী মনোভাব দেখা যায়। সুতরাং আমি শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ রাখবো, যাতে করে কঠোর ভাবে বিষয়টি সমাধান করে শিশুদের স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে সুযোগ দেয়া হয়। পাশাপাশি পাঠ্য পুস্তকে যে সকল আপত্তিকর বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, ওইসকল বিষয়গুলোসহ নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসকে সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য অনুরোধ জানাই।’
সভাপতির বক্তব্যে রথিন চক্রবর্তী বলেন, ‘বিগত দিনগুলোতে সরকারের কাছে শিশুদের নানান দাবী রাখলেও তার সম্পূর্ণ সুরাহা হয়নি। তাই এসকল বিষয়গুলো সমাধানে সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলেই হবে না, সমগ্র দেশের শিশুদের ঐক্যবদ্ধ করে তাদের অভিভাবকদের নিয়ে এই অন্যায় ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।’
অনুষ্ঠান শেষে শিশুদের অংশগ্রহণে একটি মঞ্চ নাটিকা উপস্থাপন করা হয়। নাটিকা শেষে শিশু শ্রম, শিশুদের উপড় নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধে একটি র্যালী বের করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক এবি সিদ্দিকী, সিপিবি নেতা কমরেড হাফিজুল ইসলাম, জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিখিল দাস, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল, সাধারণ সম্পাদক ধিমান সাহা জুয়েল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রুকনউদ্দিন আহমেদ, নাসিক কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস প্রমুখ।